ডেঙ্গু জ্বর কি? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার, চিকিৎসা ও করণীয়
ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। যেটি এডিস মশা পরিবাহক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত এই জবটি গৃষ্ম কালে বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ঢাকায় এই জ্বর বেশি হয়ে থাকে কেননা এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগ হয় আর এডিস মশা সাধারণত ঢাকায় বেশি জন্ম নেয়। কেননা ঢাকার পরিবেশ সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় থাকে।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক রোগ। 15 দিনের মধ্যে এই জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়। জ্বর হলে এই ঝড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিকারমূলক ওষুধ সেবন করতে হয়। আর এর প্রতিকারের জন্য কি ধরনের লক্ষণ এবং ওষুধ সেবন চিকিৎসা এসব বিষয়ে জানতে হলে আসুন আমার এই ওয়েবসাইটটিতে। আমি নিচে ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
ডেঙ্গু জ্বর কি?
এডিস মশার কামড়ে ভাইরাসজনিত জ্বর সেটি হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। একটি বিশেষ করে ঢাকায় এলাকায় প্রকোপ অনেক বেশি পড়ে। ঢাকা একান্ত বেশি হয় এই রোগের রোগী বেশি মারা যায়। স্বল্প সময়ে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক পরিণত হয়। এই মশায় কামড়ালে ইজিপ্টি নামক।
ডেঙ্গু জ্বরের কারণ গুলি
যেসব কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে সে কারণগুলো আমাদের সবার জানা দরকার। আর আজকে আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটটিতে ডেঙ্গু জ্বরের কারণ গুলি আলোচনা করব। তবে ডেঙ্গু ভাইরাস মুসা বিশেষ করে এড্রেস এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। 1779 সাল থেকে ডেঙ্গু জ্বরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলি কি কি
শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
>> এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো-
>> রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
>> নাড়ীর স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
>> শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
>> প্রস্রাব কমে যাওয়।
>> হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
লক্ষণগুলো দেওয়া হল
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার ও করণীয়
- প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত ইত্যাদি তরল খাদ্য পান করা উচিত।
- ভিটামিন-সি জাতীয় দেশি ফল বেশি করে খাওয়া উচিত। কারণ এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- —ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। কারণ এটি রক্তের উপাদানের তারতম্য করাসহ নানাবিধ ক্ষতি করে।
- ডেঙ্গু জ্বর হলে যথেষ্ট পরিমাণ বিশ্রামের থাকতে হবে.
- ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেতে হবে
- জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে ঘন ঘন গা মুছে দিতে হবে
- প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে
- রোগীর খাবার খেতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবে
- প্যারাসিটামল ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। পূর্ণবয়স্কদের জন্য ২টি করে প্রতি ৬/৮ ঘণ্টা পর পর; শিশুদের জন্য বয়স ও ওজন অনুসারে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী।
- কুসুম গরম পানি বা নরমাল তাপমাত্রার পানি দ্বারা সারা শরীর মোছা
- জ্বর থাকাকালীন রোগী দিনরাত সবসময় মশারির ভেতরে থাকবে
- যে সব ওষুধ বারণ
- >> ব্যথানাশক ওষুধ (এন.এস.এ.আই.ডি গ্রুপ যেমন, ডাইক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন, ন্যাপারক্সেন, মেফেন)
- >> এসপিরিন/ক্রোপিডোপ্রেল (এন্টি প্লাটিলেট গ্রুপ) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
- >> ওয়ারফারিন (এন্টিকোয়াগুলেন্ট) হৃদরোগীদের জন্য জ্বর থাকাকালীন ও প্লাটিলেট হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
- >> এন্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ (বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে)
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
- বাড়ির আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জলাশয় কিংবা জঙ্গল থাকলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফেলতে হবে।এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ
- পানিতে ডিম পাড়ে তাই বাসার ফুলদানি, কোন অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, কিংবা পরিত্যক্ত টায়ার থাকলে সেগুলি দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে।
- লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরের বাথরুম বা অন্য কোথাও পাঁচদিনের বেশি পানি জমানো অবস্থায় না থাকে যেমন অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচের অংশ ইত্যাদি।
- এডিস জাতীয় মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়িয়ে থাকে। এজন্য দিনের বেলা শরীর ভালোভাবে কাপড় ঢেকে রাখতে, প্রয়োজন হলে মসকুইটো রিপেলেন্ট লাগানো যেতে পারে।
- মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারীর নেট লাগাতে হবে।
- দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।
- বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হাফ প্যান্ট না পরিয়ে তাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে তারপর স্কুলে পাঠানো উচিত।
- মশা নিধনের জন্য স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহারের সাথে মশার কামড় থেকে বাচতে দিনে কিংবা রাতে মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
- সর্বপরি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে উক্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যেন কোনো মশা তাঁকে কামড়াতে না পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
- শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
- প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
- শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
- জন্ডিস দেখা দিলে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
- প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
- ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়-
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে।
- স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন- খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি।
- এ ছাড়াও গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা কি হতে পারে
- বেশি বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন: শরবত, ডাবের পানি ও পানি জাতীয় খাবার।
- রোগী খেতে না পারলে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে
- জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্রাচীন আমল জাতীয় ওষুধের যথেষ্ট।
- জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা ঘনঘন মুছে দিতে হবে
চিকিৎসকের পরামর্শ
- শরীরের যে কোন অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
- প্লাটিলেটের মাত্রা অনেক কমে গেলে।
- শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
- জন্ডিস দেখা দিলে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
- প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
- ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ হয়।